শুক্রবার, ৭ আগস্ট, ২০১৫

এক ব্যতিক্রমী ময়ের কথা


মহান মুক্তিযুদ্ধে সন্তান হারিয়েছেন
তিনি। যুদ্ধপরবর্তীতে সন্তানের
সহযোদ্ধারা তাকে আম্মা বলে
ডাকতেন। তিনি হয়ে ওঠেন সবার মা।
একাত্তরের ঘাতকরা হয়তো চিন্তা
করেনি একজন মা কিভাবে লাখো
তরুণের মা হয়ে যেতে পারেন। হয়তো
শহীদ জননী জাহানারা ইমামও
একাত্তরে রুমীকে হারিয়ে ভাবতে
পারেননি এই দেশে লাখো তরুণ এসে
রুমীর শূন্যতা পূরণ করে দেবে। সেই
হিসেবে অন্তত এটুকু বলা যায়, শ্রেষ্ঠ
এই মা ব্যতিক্রমী স্থান দখল করতে সক্ষম
হয়েছিলেন। রুমী জীবিত থাকলে
মায়ের কাছ থেকে যা পেতেন
এদেশের লাখো রুমী তার কাছ থেকে
সেই স্নেহ-ভালোবাসা পেয়েছে।
রুমী জীবিত থাকলে মা-জাহানারা
ইমাম যা পেতেন এদেশের তরুণরাও
তাকে তাই দিয়েছে। বলছি শহীদ
জননী, কথাসাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ
এবং একাত্তরের ঘাতক
দালালবিরোধী আন্দোলনের নেত্রী
জাহানারা ইমামের কথা যিনি
প্রাণঘাতী ক্যানসার নিয়ে লড়েছেন
স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির বিপক্ষে।
১৯৯১ সালের ২৯ ডিসেম্বর গোলাম
আযমকে জামায়াতে ইসলামী তাদের
দলের আমির ঘোষণা করলে
বাংলাদেশে জনবিক্ষোভ শুরু হয়।
বিক্ষোভের অংশ হিসেবে ১৯৯২
সালের ১৯ জানুয়ারি ১০১ সদস্যবিশিষ্ট
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল
কমিটি গঠিত হয় জাহানারা ইমামের
নেতৃত্বে। তিনি হন এর আহ্বায়ক।
পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের
চেতনাবিরোধী প্রতিরোধ মঞ্চ, ১৪টি
ছাত্র সংগঠন, প্রধান প্রধান
রাজনৈতিক জোট, শ্রমিক-কৃষক-নারী
এবং সাংস্কৃতিক জোটসহ ৭০টি
সংগঠনের সমন্বয়ে পরবর্তীতে ১১
ফেব্রুয়ারি ১৯৯২ ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা
বাস্তবায়ন ও একাত্তরের ঘাতক দালাল
নির্মূল জাতীয় সমন্বয় কমিটি’ গঠিত হয়।
সর্বসম্মতিক্রমে এর আহ্বায়ক নির্বাচিত
হন শহীদ জননী জাহানারা ইমাম।
মুক্তিযুদ্ধে এক সন্তানকে হারিয়ে
তিনি হন লাখো বাঙালির মা। তার
এলিফ্যান্ট রোডের বাসা কণিকায়
বসতো একাত্তরের ঘাতক দালাল
নির্মূল কমিটির বিভিন্ন সংগঠনের
আসর। তিনি ছিলেন সবার আম্মা।
সাংবাদিক প্রভাষ আমিন, আমান-উদ-
দৌলা, জাহিদ নেওয়াজ জুয়েল,
জুলফিকার আলি মাণিক প্রমুখ ছিলেন
তার খুব কাছের মানুষ। জাহানারা
ইমামের মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তারা ছিলেন
পরিবারের সদস্যের মতোই।
সাংবাদিক প্রভাষ আমিন বলেন, আমি
আমার জীবনে দুই মায়ের অস্তিত্বকে
স্বীকার করি। আমার মাকেও আমি
‘আম্মা’ ডাকি, কিন্তু জাহানারা
ইমামকে আম্মা ডাকতে কোনো
দ্বিধা ছিল না। বরং অল্প কদিনেই
স্নেহ, মায়া-মমতার যে বাঁধনে
জড়িয়েছেন, তাতে অন্য কোনো
সম্বোধনই যেন মানানসই ছিল না।
আসলে ‘আম্মা’রা সব একইরকম, মায়েরা
এমনই হয়; স্নেহ, প্রশ্রয় আর ভালোবাসার
অবিরল ধারা। একাত্তরে স্বামী-
সন্তানকে হারান। আরেক ছেলে
প্রবাসে থাকায় এলিফ্যান্ট রোডের
বাসায় একাই থাকতেন তিনি। কিন্তু
কখনো নিজেকে একা মনে করার
সুযোগ ছিল না এ শহীদ জননীর। তার
সন্তানদের উপস্থিতি থাকতো সবসময়।
তাদের সঙ্গে গল্প করে, বই পড়ে সময়
কাটাতেন মহান এ ব্যক্তিত্ব। ক্যানসার
নামক মরণব্যাধিটা যখন তাকে কুরে
কুরে খাচ্ছিল, তখনও তিনি আন্দোলন
থেকে সরে আসেননি। ক্যানসার
নিয়ে মৃত্যুবধি লড়ে গেছেন
একাত্তরের ঘাতক দালালদের
বিরুদ্ধে। অবশেষে ২৬ জুন ১৯৯৪ সালে
৬৫ বছর বয়সে মরণব্যাধি ক্যানসারের
কাছে পরাজয় স্বীকার করেন লাখো
বাঙালির মা জাহানারা ইমাম।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন